• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

নওগাঁয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ

  • ''
  • প্রকাশিত ২১ এপ্রিল ২০২৪

নওগাঁ প্রতিনিধি:

রমজান মাসের পরে একসাথে অনেক কিছুর দাম বৃদ্ধি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। এমনিতেই ভাবসা গরম আয়রোজগারও কম।

নওগাঁয়  আলুর বাজার আবারও গরম, রোজার পর দাম বেড়েছে সবজিরসহ অন্যান্য পণ্যের । তবে পুরো রমজানে প্রায় স্বস্তিতে বাজার করেছে ক্রেতারা। সবজির দাম ছিল হাতের নাগালে। রমজানে আলুর দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। কিন্তু রমজান পার হতেই বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি।

ক্রেতারা বলছেন, যথাযথভাবে বাজার মনিটরিং না থাকার সুযোগে ব্যবসায়ীরা তাঁদের ঠকাচ্ছেন। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনো অসাধু ব্যবসায়ীকে ছাড় দেওয়া হবে না।

গতকাল শুক্রবার  বিকেলে জেলার পৌর  বাজারে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে আলুসহ সবজির দাম বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। বাজার করতে আসা এনজিও কর্মী  ফারজানা চৌধুরী  বলেন, রমজান মাসের পরই বাজারে আলুর দাম বেড়েছে। এ ছাড়া সব সবজির দামও বেড়েছে। রমজান মাসে এগুলোর দাম অনেক কম ছিল।

অপরদিকে  ক্রেতা নজরুল  ইসলাম বলেন, আমাদের আয় সংসার খরচ, ওষুধ কিনতে গিয়েই প্রায় শেষ হয়ে যায়। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ আছে। রমজানেও বাজারে আলুসহ সব তরকারির দাম কম ছিল। অথচ রমজান শেষ হতেই দাম বেড়ে গেছে।

বাজার করতে আসা করিম হেসেন বলেন, রমজানেও আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি ছিল। ঈদের পর সবজির দামও বেড়েছে। আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। মাঝে মাঝে কিছু জিনিসের দাম এত বাড়ে কেন জানি না।

সবজি ব্যবসায়ী তারক হোসেন  বলেন, সবজির দাম আবার বেড়েছে। বাজারে বেগুন ৫০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকাসহ সব সবজির দাম বেড়েছে। গত রমজান মাসে সব সবজির দাম মোটামুটি কম ছিল।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজান মাসে বেগুন ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা, উচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ২০ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা, পটোল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, রসুন ১৬০ টাকা, আলু ৬০ টাকা। অথচ রমজান মাসে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ টাকা, রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে  জানা যায়,

লাল মসুর ডালের দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি লাল মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা এবং আমদানি করা মসুর ডাল (মোটা জাত) বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।

রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটার টিনজাত সয়াবিন তেল ৮৬০ টাকা, আলগা সুপার পাম অয়েল ১৬০ টাকা, চিনি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, গুড় ১৭০ থেকে ২০০ টাকা এবং চিড়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা, পাইজাম ৬০ থেকে ৬৪ টাকা, নাজিরশাইল ব্র্যান্ডের চাল ৭২ থেকে ৮০ টাকা, মিনিকেট ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা, কাটারি ভোগ ৯০ টাকা, পোলাও চাল ১৪০ থেকে ১৫৫ টাকা এবং কালিজিরা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার  শনিবার পৌর কাঁচাবাজারে আটা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা এবং দুই কেজির প্যাকেট ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকারের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের খবরে মাছের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য মাছের মধ্যে- পুটি প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, জীবন্ত পুটি ৫০০ টাকা কেজি, খলিসা ৪০০ টাকা কেজি, চাপিলা ৫০০ টাকা কেজি, চাষের কই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, ফলি চান্দা (রূপচাদা) ১৪০০ টাকা কেজি, চান্দা ছোট ৪০০ টাকা কেজি, শোল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বাইম ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি, মেনি ৫০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি।

কাইট্টা মাছ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি, কোরাল মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, নদীর পাঙ্গাস ৭০০ টাকা কেজি, চাষ করা পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, রাজপুটি ৪৫০ টাকা কেজি।তেলাপিয়া কেজি ২৪০ টাকা, রুহিত ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, মাঝারি সাইজের কার্প (কাতল) প্রতি কেজি ৩০০-৩২০ টাকা, বড় সাইজের কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, স্থানীয় জাতের শিং মাছ প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, কোরাল ৬০০ টাকা কেজি, গলদা চিংড়ি ৮০০-১০০০ টাকা কেজি এবং চিংড়ি ৫০০-৬০০ টাকা কেজি।

গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, মাটন ১১৫০ থেকে ১১৮০ টাকায়। মাঝারি আকারের দেশি মোরগ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং মুরগি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম (ফার্ম) প্রতি ডজন ১৬০ টাকা, ডিম (স্থানীয়) ৭০ টাকা এবং ডিম (হাঁস) ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি জোড়া কবুতর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোঃ গোলাম মওলা বলেন, বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনো সিন্ডিকেট তৈরি করতে দেওয়া হবে না। অতিরিক্ত দাম নিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য বাজারের পরিস্থিতি খারাপ হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads